শেখ সাদ্দাম হোসেন



আমি কি আর ফিরবো সচেতনে?

আমি কই যেন গোসল করতে নামছি বাঁধানো ঘাট পদ্ম টদ্ম ফুঁইটাও ছিল সম্ভবত কী কইরা বলি! গোসল করতে নাইমা আমি অবচেতনে কই যেন হারায় আছি, যেনবা আমি নাই হঠাত ন্যানো সেকেন্ডেরও কম সময়ের জন্য হয়তো আমি সচেতনে ফিরি আর একটা দীর্ঘ লম্বা শাপ পুটি মাছের মতো মুখ প্ল্যাঙ্ক টাইমেরও কম সময়ের মধ্যে আমারে একটা ছোবল দিল কি? আমি তো চইলা গ্যাছি ফের অবচেতনে সচেতনে কি আমার বিষাক্ত মরা শরীর ভাসতেছে পানিতে? কে জানে? আমি কি আর ফিরবো সচেতনে?

কেন্দ্রে কেবল মৃত্যু, কেবল শূন্য

এবার বোধ করি সব ছেড়ে ছুড়ে যেতে হবে একদিকে, কোনদিকে? একদিকে। যেতে যেতে সব দিক ঘুরে এসে আবার যেতে হবে একদিকে! কোনদিকে? শুরু হবে কোনদিক থেকে? যেদিক থেকে উঠে আসে সূর্য? নাকি যেদিকে ডুবে যায় অস্ত? একদিকে তো যাওয়া শুরু করতে হবে। হবেই কেন? না গেলে মৃত্যু চেপে বসবে যদি সারাক্ষণ বলে যেতে থাকি যাবো যাবো এবার একদিকে যাবো; এবার শুরু করতে হবে। কিছুই কী তবে শুরু হয় নাই? হায় হায়! তবে যে জীবন ফুঁড়ায় আসে! আঁধার ঘনায় আসে। নাকি মৃত্যু দিয়াই একদিকে যাবো আমি। নাকি তবেই আমার একদিকে ভেড়া হবে, যাওয়া হবে।
তার আগে করি প্রশ্ন, আমার কেন দিকে যাওয়া হলো না কোন? আমি কেন সেন্ট্রালেই সবদিকের সংযোগস্থলে গড়াগড়ি খাইতে থাকলাম? সবাই তো বহু জোগাড় যতন করে কেন্দ্র ছেড়ে দিকে দিকে চলে গেল, ফিরে এলো, এসে দেখলো কেন্দ্রেই আমি গড়াগড়ি খাইতেছি। তারা তো কেন্দ্রে থাকে না তাই আবার চলে যায় দিকে।
কিন্তু কেন্দ্রে আমি কী করতেছি? কেবল গড়াগড়ি খাইতেছি? কেবল শূন্য লইয়া ধ্যানরত আছি? পর্যবেক্ষণ করছি সকল দিকে দিকে ছোটা মানুষের সংযোগস্থল ফেলে ছুটে চলা? নাকি কোনদিকে যেহেতু যাই নাই আমি তাই আমি কিছু করতেছি না। আমি কেবল শূন্য থেকে শূন্যই থেকে যাইতেছি। আমার জন্ম হইতেছে না-আমি কেবল জন্মের আগে, জন্মের পরের মৃত্যুটি, কেন্দ্রটি নিয়ে শুরু না জানা, শেষ না জানা মহাশূন্যে শূন্যরূপে বিরাজ করতেছি। একদিকে আর যাওয়া হইতেছে না, এক আর হওয়া হইতেছে না।


কামুকের মৃত্যু

শাড়ির পাতলা আবরণ ভেদ কইরা যে সুন্দর পেট দেখা যায়,
অইটা কার তৈরি মদের গেলাস!
খুব গভীর কোন কূপের জল নাকি তোলা অইখানে?
শীতল, কামনার জল!
নাকি গণকবর দাও অইখানে কামুকের?
পইরা কামের কূপে দাপিয়ে মরে অতৃপ্ত, অসংযমী আত্মা।

রাইতে রাঁধা, ভোরে ব্রহ্মচারী!
বুঝলাম ঢের রাত হইছে
আকাশে চাঁদ ক্রমশ স্পষ্ট হইয়া উঠতেছে
বুকে রাত এমনে কইরা গভীর রকমে না জাগিলে
আকাশের চাঁদ ঝাপসা হইয়া আসে, আবছা হইয়া আসে।
এমন একটা গভীর রাত অথচ জ্যোৎস্না ভরা চাঁদ
মাঠের গাঁয়ে জলে সে জলে বেশ্যাটির মতো ছড়াইয়া রহিয়াছে
আমার ছিপছিপে নাউ-সে নাউ বয়ে যায় জলে
শাদা জল কাটিয়া চলে!
ঢেউয়ের গায়ে গায়ে চূর্ণ বিচূর্ণ চাঁদ ভাইসা যাইতেছে
মাছের গায়ে ভর করিয়া ছুইটা চলতেছে
অতি সন্নিকটে ভোর, বক-মানুষের কাটিবে ঘোর
মাছ, জল দ্রুত ছোটে শাপলা ফোটে; চন্দ্র পালায়।
দু চোখে ভোর ফুঁইটা উঠতেছে
শাপলার চোখে সূর্য জাগতেছে
জলের গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুয়াশা ভাসতেছে
দূরে মুক্ত মাথায় সর্পের মতো পদ্ম ফুটিয়া আছে।


শ্বাসকষ্ট

কাঁদতেছি না
একফোঁটাও না
কতদিন কাঁদি না সে কি আর আমি জানি!
আমি কি আর সচেতন
সংসারীদের মতন!

শিশুর মতো মন শৈশব ফুঁড়াইলো পরে
এরপর শুধু একদিন গড়িয়ে কেঁদেছিলাম
অটল জলে ঢেউ লেগে গিয়েছিল লে!

এরপর রোজ আমার ঘর ভাঙে
মহাকাশময় তরঙ্গ খেলে যায় বুকে
আগুন লাগে শরীরে
সংশয়-সংকটে পুড়ে যাই!
মরে যায় কতো তত্ত্ব, ফ্যান্টাসি-ফ্যালাসি
মৃত্যু দেখি; বুঝি বোধগম্যতার ভার

কেঁপে কেঁপে ঠোঁট ফেটে যায়
চোখের কোণে ময়লার স্তুপ জমে থাকে
ভেতরে বলগ ওঠা ভাতের মতো রক্তঝর বয়
কাশতে গিয়ে মাঝেমধ্যে আগুন বেরিয়ে আসে
লাল আগুন
আর তাকিয়ে হাসি যেন এই চেয়েছিলাম!

ভেতরে একপাশে হয়তো কয়লার খনিও পাওয়া যাবে
কতো সবুজ গাছ চাপা পড়েছিল হাজার বছর
মহাশূন্যের গোটা শূন্য জুড়ে মস্তিষ্ক ছড়িয়ে পড়ে
নিশ্বাস নিতে পারি না
শ্বাসকষ্ট
বাতাসের অভাব, ভালবাসার অভাব!

পাথরের পাহাড়

কতো বড় বড় ধারালো পাথর
যুগের পর যুগ বয়ে এনে ফেলেছি
অতীতের উপর, অস্তিত্বের উপর
একটা মস্ত বড় পাথরের পাহাড়
দাড়িয়ে গেছে আকাশ ছুঁয়ে
তবু যখন ঘুম এসে যায় নির্জনতায়
স্বপ্নে জেগে ওঠে সব চাওয়া, অতীত স্মৃতি
ওখানে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নাই
তাই পাথরের পাহাড় ফেটে ঝর্ণা বেরিয়ে আসে
ঘুমের ঘোরে কান্নার মতো
আর মস্ত পাহাড় নীল আকাশের বেদনার কাছে
কী ভীষণ ক্ষীণ হয়ে আসে
তবু আমি রাত জেগে পাথরের পাহাড় বানাই
ঘুমাই না
ঘুমালেই কষ্টেরা আকাশ হয়ে আসে
স্বপ্নেরা ভূমিকম্প তুলে ধুলো করে দেয়
দুঃখ চাপা দেয়া আমার পাথরের পাহাড়।

অরুচিকরভাবে জমকালো

শহর থিকা গ্রামে ফেরা শহুরে ছেলেমেয়েরা
তারা ফেরে ফেসবুকে চেক ইন দিয়া
যেমন গ্রাম থিকা শহরে আসে গ্রামেরগুলা!
শহরেরগুলা গ্রামের বাড়ির উঠানে মডার্ন হাসি হাসে
ইংরেজি আর কলকাতা বাংলায় কথা বলে
মডার্ন হাসিতে পাশের বাড়ির রহিমার বুক ফাটে
করিম যদি পইরা যায় বজ্জাত মাইয়ার ফাঁদে!
কিন্তু রহিমাও তো কম সুন্দরী না
সবুজ পাতার ঠোঁট তার
আকাশ নীল চোখ যার!
শহুরে পোলা জনি ফিরা ফিরা তাকায়
ডি এস এল আর দিয়া দুএকটা ছবিও তোলে
গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাইতে ব’লে
বুকের কাছে নিশ্বাস ফেইলা রহিমার মন হাপায়
হায় হায়!
শহর থিকা ফেরা পোলাপাইন শহরে ফিরা যায়
ঈর্ষা, হিংসার ছোটলোকি বীজ বুইনা যায়।
রহিমা করিম আইলো নেগোসিয়েশনে
তারা আর তাকাইবে না যাহার তাহার পানে।
তা না তাকাইলো
কিন্তু কারে কেমন দেখাইলো
তারা তা মনে মনে মিলাইতে থাকিলো।
এই যে গেরামের পোলাপাইনের প্রভাবিত হওয়া
তা না হয়ে ওঠা শহুরে না থাকে গ্রাম্যতা।
অরুচিকরভাবে জমকালো হয়ে ওঠে তখন
ঠিক যেমন শহুরে পোলাপাইন হয়া উঠছে
ওয়েস্টার্নদের অনুকরণে

No comments:

Post a Comment